Tuesday, April 7, 2020

One day trip to Lalitgiri Odisha Tour,ললিতগিরি ,ওড়িশ্যার _ Bangla Travel blog

ললিতগিরি । ৮ই মার্চ ২০২০।

কাজের সুত্রে ওড়িশ্যার পারাদ্বিপে আমাদের বসবাস । এক অলস রবিবারে ঠিক করলাম কাছাকাছি কোথাও বেড়িয়ে আসি। যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম ললিতগিরির উদ্দেশ্যে। সহকর্মীদের থেকে শুনেছিলাম জায়গাটি ভাল। এক্টু ধারনা ছিল যে জায়গাটিতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন নিদর্শন আছে। পারাদ্বিপ থেকে ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত ললিতগিরি । ভুবনেস্বর থেকে দূরত্ব ৯০ কিমি এবং কটক থেকে ৬০ কিমি। রাস্তা খুব ভাল, যদি কেউ মনে করেন zoomcar থেকে গাড়ি নিয়ে নিজেরা drive করে আসবেন, নিঃসন্দেহে তা করতে পারেন। আর তা না হলে, কটক কিংবা ভুবনেস্বর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন।






Public Transport এর সুব্যাবস্থা নেই, তাই সেই চেষ্টা না করাই ভাল। আমরা ১.৫ ঘণ্টার মধ্যে পউছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। সুবিশাল parking lot থাকায় গাড়ি রাখার কোন সমস্যা নেই, parking নিঃশুল্ক। প্রবেশ দ্বারের পাশেই রয়েছে টিকিট কাউন্টার। প্রবেশ মুল্য মাথাপিছু ২৫ টাকা।




ওড়িশ্যার রত্নগিরি, উদয়গিরি এবং ললিতগিরি – এই তিনটি স্থানকে একসাথে Golden Triangle বলা হয়। গৌতম বুদ্ধ কোনদিন ওড়িশ্যা না এলেও মৌর্য সম্রাজ্যের সময় (খ্রিষ্ট পুর্বাব্দ তৃতীয় শতক) সমগ্র Asia তে যে ব্যাপক হারে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ঘটে, তার প্রভাবেই এই স্থাপত্যগুলির নির্মাণ হয় বলে মনে করা হয়। ভিতরে প্রবেশ করার পর সবচেয়ে প্রথমে যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তা হল পরিচ্ছন্নতা। দেখেই বোঝা যায়ে, জায়গাটি পরিস্কার রাখতে প্রশাসনের সুনজর আছে। কিছুটা এগিয়ে যাবার পর উপস্থিত হলাম একটি Air Conditioned মিউজিয়ামের সামনে। মিউজিয়ামটির ভিতরে ফটো তোলা নিষেধ। হরেক রকমের পাথরের ফলক এবং বৌদ্ধ মূর্তি রাখা রয়েছে স্থানটিতে। Golden Triangle এ খনন কার্য চালানো হয় ১৯৮৫ থেকে ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ অব্দি। তার ফলস্বরুপ কাঁচ দিয়ে ঢাকা এই সব ফলক এবং বুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব, তারা, জাম্বালাদের মূর্তি। সব থেকে ভাল লাগে, ভিতরে guide এর কোন উপদ্রব নেই। প্রতিটি relic এর পাশে হিন্দি ও ইংরেজিতে তার বিবরণ লেখা আছে। তাছারাও যে সুরক্ষাকর্মিরা মিউজিয়ামের মধ্যে থাকেন, তারা সুন্দর বর্ণনা দিয়ে অনেক সাহায্য করেন। একের পর এক স্থাপত্য প্রত্যক্ষ করার সময় মনটা যেন হাজির হয়ে যায় সেই রাজকীয় ঐতিহাসিক সময়ে।




এর পর বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলাম ভিতরের দিকে। পথের দুই পাশে অতিক্রম করলাম একাধিক ভগ্নাবশেষ। এই গুলির মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল চৈত্যগ্রিহ বা প্রার্থনাগৃহ। ইঁট দিয়ে নির্মাণ করা ১০৮ X ৩৬ ফুট মাপের জায়াগা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ২৩০০ বছরের পুরনো ভগ্নাবশেষ। এর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি গোলাকার স্তূপ। আরও কয়েকটি স্থাপত্য পার করে পৌঁছে গেলাম ললিতগিরির শেষ প্রান্তে একটি বেশ বড় স্তূপের সামনে। এই স্তূপের মধ্যে থেকেই নাকি খনন কার্যের সময় পাওয়া গেছে একটি পাথরের, একটি রুপোর আর একটি সোনার ছোট বাক্স। এই বাক্সগুলি বর্তমানে রাখা আছে ওই মিউজিয়ামের মধ্যে। এই স্তূপটি একটু উঁচুতে অবস্থিত এবং পৌঁছতে কয়েকটি সিঁড়ি ভাঙতে হয়। ওপর থেকে অনতিদূরে গ্রাম এবং সবুজ রঙের ছোট পাহাড় দেখা যায় – বেশ মনোরম দৃশ্য।




এখানেই শেষ হল আমাদের ললিতগিরি ভ্রমণ। ভিতরে কোন ব্যাটারি কার বা রিক্সার ব্যাবস্থা নেই। পুরো জায়গাটি হেঁটেই ঘুরতে হবে। সময় লাগে ৪০-৫০ মিনিট। জলের বোতল বাইরে থেকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকতে হবে, কারণ ভিতরে কোন দোকান নেই।

বেশ কয়েকটি website ঘেঁটে জানতে পারলাম যে এই জায়গা থেকেই নাকি উৎপত্তি বজ্রায়ন বা তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের, যা পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, ভূটান এবং অন্যান্য উপমাহাদেশে। তিব্বতের ইতিহাসে নাকি লেখা আছে যে সম্বল্পুরের রাজা ইন্দ্রভুতি প্রথম শুরু করেন বজ্রায়নের এবং এই Golden Triangle এর থেকে ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে Asia মহাদেশে। আজ গোটা বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মের ২ কোটির বেশি মানুষ এই বজ্রায়নের অনুগামী। অর্থাৎ ললিতগিরি ঐতিহাসিক তাৎপর্যে সম্পূর্ণ। তাই যদি কখনো পুরী ভ্রমণ করতে বা কর্মসূত্রে ভুবনেস্বর বা কটকে আসেন, তাহলে একবার স্বচক্ষে দেখে যেতেই পারেন আমাদের দেশে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ ধর্মের উজ্জ্বল অস্তিত্বের রাজকীয় ইতিহাস।


Subscribe
Lalitgiri Travel Video Link
Watch the Video and dont forget to subscribe and support our channel. Video in English








No comments:

Post a Comment

Chandaka Deras Nature Camp

দেরাস নেচার ক্যাম্প - চান্দাকা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি বিস্তীর্ণ ঘন সবুজ অরণ্য, সুনীল জলরাশি, অদূরে ছোট পাহাড়, আকাশে টুকরো মেঘের আন...